জমে উঠেছে ৭৮ বছরের ঐতিহ্য চেরাডাঙ্গী ঘোড়ার মেলা

oppo_0
দিনাজপুরে জমে উঠেছে ঐতিহাসিক চেরাডাঙ্গী ঘোড়ার মেলা। মেলায় গেলেই দেখা মিলছে আগুন পাখি, সুমি, হিরো, বিজলী, রাস্তার পাগল, রানী, সুইটি, রংবাজ এমন বাহারি সব নামের সব ঘোড়ার।
এসব ঘোড়ার গতি আর বুদ্ধিমত্তায়ও মেলে এদের নামের স্বার্থকতা। ঘোড়াগুলোর দুলকী চলনে বিদ্যুৎ গতি, চোখের পলকে যেন মাইল পার। এমন নানামুখী গুণের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘোড়াগুলোর কদরও যথেষ্ট।পছন্দের ঘোড়া কিনতে ক্রেতাদের মধ্যেও চলছে রীতিমতো প্রতিযোগিতা। বিক্রির জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মেলায় এসেছেন ঘোড়া ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঘোড়া বিক্রির জন্য আসছেন এই মেলায়। কেউবা গাড়িতে করে আবার কেউবা ঘোড়ার পিঠে বসে আসতে দেখা গেছে ঘোড়া বিক্রিতাদের। ক্রেতাদের সমাগমও দেখা গেছে অনেক।
জনশ্রুতি আছে, ৭৮ বছর আগে শুরু হওয়া এই মেলায় আগে গরু, ছাগল, ঘোড়া, মহিষসহ উট ও দুম্বার ব্যাপক আমদানি হতো ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। কালের বিবর্তনে ওইসব প্রাণীর পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে গরু, মহিষ এবং ঘোড়া। এছাড়া বিনোদনের জন্য যাত্রা, সার্কাস, পুতুলনাচ এবং সংসারের যাবতীয় আসবাবপত্র কাঠ, স্টিল ও প্লাস্টিকের ফার্নিচার, মিষ্টান্ন, মসলা, জুতা ও কাপড়সহ এমন কোনো জিনিস নেই যা এ মেলায় বিক্রি হয় না। প্রায় আড়াই কিলোমিটার বর্গাকার এ মেলা ঘিরে এলাকার প্রায় ২০ গ্রামে চলে মেজবান আয়োজন।
দিনাজপুর ঘোড়াঘাট উপজেলা থেকে মেলায় ঘোড়া বিক্রেতা শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি এই মেলায় তিনটি ঘোড়া নিয়ে এসেছি। এখনও একটি ঘোড়াও বিক্রি করতে পারিনি। তবে দামদর হচ্ছে। আমার এক ঘোড়ার দাম ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বলছে। আর কিছু টাকা বেড়ে বললে ঘোড়াটি ছেড়ে দিবো।
আরেক ঘোড়া বিক্রিতা আজাহার আলী বলেন, আমরা দুই ভাই মিলে চারটি ঘোড়া নিয়ে এসেছি।ঘোড়া গুলো অনেক ক্রেতা দেখছে। দামদর ও করছে কিন্তু দাম না বনায় এখনও বিক্রি করতে পারি নি । আশা করি আমার সব ঘোড়া বিক্রি হবে।
খানসামা থেকে মেলায় ঘোড়া কিনতে আসা আব্দুস সালাম বলেন, আমার দশ বছরের সখ আমি আমি একটা ঘোড়া কিনবো। আজ সেই ইচ্ছা আমার পূরণ হল। আমি ও আমার নাতি এই ঘোড়া দেখা শুনা করবো।
পার্বতীপুর থেকে আরেক ঘোড়া ক্রেতা সুজন হক বলেন, আমি ঘোড়া দেখলাম। ঘোড়া পছন্দও হইছে। দামে মিললে ঘোড়াটি কিনবো।
কাহারোল থেকে মেলা দেখতে আসা মৌসুমি বলেন, আমি আমার স্বামীর সাথে চেরাডাঙ্গীর মেলায় এসেছি। আমি যখন দিনাজপুর সরকারি কলেজে পড়ালেখা করতাম তখন এই মেলার শুরুর এক দিন আগে ঘোড়া দৌড় দেখতে আসতাম। সেই সুবাদে আজ আমি, আমার স্বামী ও আমার ছেলে মিলে এই ঘোড়ার মেলায় এসেছি।
মেলায় কথা হয় আর্নিকা তাবাসুমের সাথে। বাসের হাট থেকে এই মেলা দেখতে আসছে।আর্নিকা তাবাসুম বলেন, আমি আমার বাবার সাথে এই মেলায় আসছি।মেলায় এসে ঘোড়া ও ঘোড়ার দৌড় দেখলাম। দেখে আমাকে অনেক ভালো লাগল।
চেরাডাঙ্গী মেলার সভাপতি মোঃ রাশেদ-উজ-জামান (রুপন) ঢাকা মেইলকে বলেন, আজকের এই আধুনিক যুগে, মোবাইলের যুগে ও যান্ত্রিকের যুগে ধীরে ধীরে আমাদের যে গ্রাম বাংলার ঘোড়ার গাড়ি, ঘোড়া দৌড়, ঘৌড়া কেনাবেচা এই জিনিস গুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে প্রায়। এগুলো যেন বিলুপ্তি না হয়ে যায়, আমাদের সন্তানেরা যেন গ্রাম বাংলার পশু পাখি গুলোকে চিনে থাকে এই উদ্দেশ্যে চেরাডাঙ্গি মেলায় পশু হাটটি আয়োজনা করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন